যুদ্ধবিধ্বস্ত সুদানে জাতিসংঘের একটি শান্তিরক্ষা ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় ছয়জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও আটজন। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় কর্দোফান অঞ্চলের কাদুগলি শহরে অবস্থিত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি লজিস্টিক ঘাঁটিতে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
নিহত ও আহত সবাই জাতিসংঘের ইউনাইটেড নেশনস ইন্টারিম সিকিউরিটি ফোর্স ফর আবেই (ইউনিসফা)–এর সদস্য হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে।
হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “সুদানের কাদুগলিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর লজিস্টিক ঘাঁটিকে লক্ষ্য করে চালানো নৃশংস ড্রোন হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের লক্ষ্য করে হামলা আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “দক্ষিণ কর্দোফানে শান্তিরক্ষীদের ওপর এ ধরনের হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ঘটনার জন্য অবশ্যই জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।”
সুদানের সেনাবাহিনী এই হামলার জন্য আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-কে দায়ী করেছে। সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ চলছে। তবে হামলার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে আরএসএফের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এক বিবৃতিতে সুদানের সেনাবাহিনী জানায়, “এই হামলা বিদ্রোহী মিলিশিয়া ও তাদের পেছনে থাকা শক্তির ধ্বংসাত্মক মনোভাব স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে।” একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে জাতিসংঘের স্থাপনা বলে দাবি করা একটি এলাকায় ঘন কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলি উঠতে দেখা যায়।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এক বিবৃতিতে জানান, এই হামলার ঘটনায় তিনি গভীরভাবে শোকাহত। তিনি ছয়জন নিহত ও আটজন আহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেন। একই সঙ্গে তিনি জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান, যেন বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের জন্য প্রয়োজনীয় সব জরুরি সহায়তা নিশ্চিত করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদানের সামরিক বাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব পূর্ণাঙ্গ গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। এ সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৪০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে, যদিও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি।
সাম্প্রতিক সময়ে সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে কর্দোফান অঞ্চল। বিশেষ করে পশ্চিম দারফুরে সেনাবাহিনীর শেষ ঘাঁটি এল-ফাশার দখলের পর সংঘর্ষ আরও তীব্র হয়েছে। এই যুদ্ধে শহরাঞ্চল ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়েছে এবং গণধর্ষণ ও জাতিগত সহিংসতাসহ ভয়াবহ অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এসব ঘটনা যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল।
এই সংঘাত বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি করেছে এবং সুদানের বিভিন্ন অঞ্চলকে দুর্ভিক্ষের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
এই হামলার ঘটনা ঘটল এমন এক সময়ে, যখন মাত্র এক মাস আগে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ইউনিসফা মিশনের মেয়াদ আরও এক বছরের জন্য নবায়ন করেছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অন্যতম বৃহৎ অবদানকারী দেশ। বর্তমানে ইউনিসফার প্রায় চার হাজার পুলিশ ও সেনা সদস্য আবেই অঞ্চলে বেসামরিক জনগণের সুরক্ষায় দায়িত্ব পালন করছেন—যেখানে নিয়মিত সশস্ত্র সংঘর্ষ ঘটে।