বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। সংস্থাটির সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের মাত্র ২৮.৬ শতাংশ স্কুলে প্রতি ৫০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একটি উন্নত টয়লেটের সুবিধা রয়েছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ন্যূনতম মানদণ্ড। এ অবস্থাকে উদ্বেগজনক উল্লেখ করে বিবিএস বলছে, এতে পরিবেশ দূষণ ও রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।
রবিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, এসআইডি সচিব আলেয়া আক্তার, এসআইডির অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ সোহেল রানা চৌধুরী, ইউনিসেফ বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত প্রতিনিধি ফারুক আদরিয়ান ডুমন এবং এসডিজি সেলের ফোকাল পয়েন্ট মো. আলমগীর হোসেন।
জরিপে দেখা গেছে, দেশের মাত্র ৩৩.৯ শতাংশ স্কুল এবং ৪৫.৪ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান নিরাপদভাবে মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনা করে থাকে। বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা খাতে এই সংকট আরও প্রকট। মাত্র ২৫.৪ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান মৌলিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মান পূরণ করতে পেরেছে। উদ্বেগজনকভাবে, ৪১.৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্য পোড়ানো হয়, যা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে।
পানির প্রাপ্যতায় তুলনামূলক ভালো চিত্র দেখা গেলেও মানদণ্ড পূরণে ঘাটতি রয়ে গেছে। জরিপ অনুযায়ী, ৯৫.৪ শতাংশ স্কুল ও ৮৭.৫ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে উন্নত পানির উৎসে প্রবেশগম্যতা রয়েছে। তবে উন্নত পানির উৎস প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণের ভেতরে থাকা—এই গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড পূরণ করেছে মাত্র ৮৬.১ শতাংশ স্কুল ও ৭০.৫ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য উপযোগী পানি সুবিধার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও হতাশাজনক; মাত্র ৫৫.৪ শতাংশ স্কুল এবং ৪০.৯ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান এ সুবিধা নিশ্চিত করতে পেরেছে।
হাত ধোয়ার সুবিধা ও স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থাপনাও আশানুরূপ নয়। জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৫১.৭ শতাংশ স্কুল এবং ৫.০ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান হাত ধোয়ার মৌলিক মান পূরণ করতে সক্ষম। এতে সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যাহত হচ্ছে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যবিধির মান কমে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে বিবিএস।
কিশোরীদের মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাতেও (এমএইচএম) বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে। দেশের মাত্র ২০.৭ শতাংশ স্কুলে কিশোরীবান্ধব নিরাপদ টয়লেট রয়েছে এবং মাত্র ৬.৯ শতাংশ স্কুলে মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা সেবা দেওয়া হয়।
এ ছাড়া জরিপে উঠে এসেছে, স্যানিটেশন খাতে বরাদ্দের অভাবও একটি বড় সমস্যা। মাত্র ১১.১ শতাংশ স্কুল এবং ৩৪.৯ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে এই খাতে নির্দিষ্ট বাজেট রয়েছে। যদিও দেশের ৯০.৬ শতাংশ স্কুল ও ৯৮.৫ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে অন্তত একটি টয়লেট রয়েছে, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেগুলোর মান, ব্যবহারযোগ্যতা ও প্রয়োজনীয়তা আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাবও এই খাতকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। জরিপে দেখা গেছে, গত এক বছরে ২৪.০ শতাংশ স্কুল এবং ১৯.৪ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান দুর্যোগের সম্মুখীন হয়েছে, যার ফলে পানি ও স্যানিটেশন অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতির ক্ষেত্রেও বড় ঘাটতি রয়েছে। মাত্র ৩৩.৭ শতাংশ স্কুল এবং ৯.৯ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে পর্যাপ্তভাবে অবগত।
বিবিএস বলছে, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে স্যানিটেশন উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়ানো, কার্যকর শাসন কাঠামো জোরদার করা এবং ভৌগোলিক ও ব্যবস্থাপনাগত বৈষম্য কমানো জরুরি। তা না হলে জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
সূত্র: বিবিএস।