শহীদ শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকারীদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করার আল্টিমেটাম দিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। একই সঙ্গে, হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকে সরকার কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে, সে বিষয়ে জনগণের সামনে স্বচ্ছ জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে এক বিক্ষোভ সমাবেশে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের এ আল্টিমেটাম ঘোষণা করেন। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে শরিফ ওসমান হাদির দাফন সম্পন্ন হয়। দাফন শেষে ইনকিলাব মঞ্চের নেতাকর্মীরা শাহবাগে অবস্থান নেন।
সমাবেশে আব্দুল্লাহ আল জাবের বলেন, ইনকিলাব মঞ্চের দাবি দুটি—প্রথমত, ওসমান হাদির হত্যাকারী, হত্যার পরিকল্পনাকারী ও সহযোগীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। দ্বিতীয়ত, সিভিল ও মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের ভেতরে থাকা আওয়ামী দোসরদের দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আগামীকাল রবিবার বিকালের মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও সহকারী উপদেষ্টাকে জনগণের সামনে এসে জবাবদিহি করতে হবে। তা না হলে তাদের পদত্যাগ করতে হবে বলেও দাবি জানান তিনি। এ সময় আগামীকাল বিকাল সাড়ে পাঁচটায় শাহবাগে পুনরায় অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণাও দেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব।
জাবের দাবি করেন, শরিফ ওসমান হাদিকে একজন ব্যক্তি নয়, বরং একটি সংঘবদ্ধ চক্র হত্যা করেছে। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলকে আমরা একেবারে সন্দেহের বাইরে রাখছি না, আবার কাউকে একচেটিয়াভাবে দোষারোপও করছি না।”
নির্বাচনকে ঘিরে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন রয়েছে। নির্বাচন বানচাল করা এবং আওয়ামী লীগের প্রত্যাবর্তনের পথ তৈরি করতেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে তারা মনে করছেন। তার ভাষায়, “ওসমান হাদিই ছিল জনতার কণ্ঠস্বর, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। তাকে হত্যা করলে রাজনৈতিকভাবে সুবিধা নেওয়া যাবে—এমনটাই তারা ভেবেছে।”
সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে জাবের বলেন, হত্যাকাণ্ডের ১৭২ ঘণ্টা পার হলেও রাষ্ট্র এখনো বলতে পারেনি, খুনিরা কোথায়। তিনি বলেন, “গত ১৭ বছরে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ৪০ ফুট মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা মানুষকেও খুঁজে বের করেছে। তাহলে এখন কেন পারছে না?”
তিনি আরও জানান, আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে গুম কমিশনের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হতে যাচ্ছে, যেখানে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে কথা বলা ব্যক্তিদের গুম ও হত্যার তথ্য উঠে আসবে। এ প্রেক্ষাপটে জনগণকে শান্ত থাকার এবং কোনো ধরনের ভাঙচুরে না জড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে শাহবাগ এলাকায় নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশ, এপিবিএন ও বিজিবির বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়। প্রস্তুত রাখা হয় জলকামান ও এপিসি। পাশাপাশি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে মিন্টো রোডমুখী সড়ক ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
উল্লেখ্য, শুক্রবার সন্ধ্যায় শরিফ ওসমান হাদির মরদেহ সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকায় পৌঁছায়। রাতে তা জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের হিমঘরে রাখা হয়। শনিবার সকালে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় নেওয়া হয়। সেখানে জানাজা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দাফন সম্পন্ন করা হয়। দাফনকালে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদ ও প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদসহ অনেকে।