মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকায় টানা গোলাগুলি ও মর্টারশেল বিস্ফোরণের ঘটনায় কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সীমান্তবর্তী জনপদে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। সংঘর্ষের সময় ছোড়া গুলি নিয়মিতভাবে বাংলাদেশ অংশের বসতঘরে পড়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা রাত কাটাচ্ছেন ভয় ও উৎকণ্ঠার মধ্যে। গোলাগুলির বিকট শব্দে পুরো সীমান্ত এলাকা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইনামুল হাফিজ নাদিম বলেন, “সীমান্তে গোলাগুলির বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবহিত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিজিবির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। সীমান্তবর্তী মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” তিনি জানান, বিষয়টি কক্সবাজার জেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় গুরুত্বসহকারে আলোচনা করা হয়েছে এবং সার্বিক পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অধিকাংশ শহর ও সীমান্ত এলাকা বর্তমানে আরাকান আর্মির দখলে রয়েছে। পাশাপাশি সেখানে রোহিঙ্গাদের কয়েকটি সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সক্রিয়তা থাকায় প্রায়ই কক্সবাজার সীমান্তে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। সংঘর্ষে ব্যবহৃত অস্ত্র থেকে ছোড়া গুলি প্রায়শই বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এসে পড়ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলে হাসান আলী জানান, শনিবার টানা গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দে বাড়িঘর কেঁপে উঠেছে। আতঙ্কে অনেক পরিবার সন্তানদের নিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। “অনেকেই সারা রাত ঘুমাতে পারেননি,” বলেন তিনি।
বালুখালির বাসিন্দা সরওয়ার আলম বলেন, “যেভাবে গোলাগুলি হয়েছে এবং আমার ঘরে গুলি এসে পড়েছে, আমরা খুব ভয় পেয়ে গেছি। মনে হচ্ছে, যেকোনো সময় আবার গুলি আসতে পারে।”
হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সিরাজুল মোস্তফা লালু জানান, হোয়াইক্যং সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় শনিবার বৃষ্টির মতো গোলাগুলি ও মর্টারশেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে সীমান্তবর্তী জনপদে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তিনি বলেন, নাফ নদীসংলগ্ন এলাকায় স্থানীয়রা চিংড়ি ঘের, চাষের জমি কিংবা মাছ ধরতে যেতে পারছেন না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, মিয়ানমারের প্রায় ২৭০ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা আরাকান আর্মির দখলে থাকলেও জান্তা সরকার সেসব এলাকা পুনর্দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় চলমান সংঘর্ষে বিস্ফোরণের শব্দ ও ছোড়া গুলি মাঝেমধ্যেই বাংলাদেশ অংশে এসে পড়ছে, যা সীমান্তবাসীর নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।