বাংলাদেশে নতুন করে চরমপন্থা ও উগ্রবাদী রাজনীতির উত্থান দক্ষিণ এশিয়া তথা বিশ্ববাসীর জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ—এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ও রাজনীতিকরা। ব্রিজ বাংলা ফাউন্ডেশনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ ২০২৫’ শীর্ষক ব্রিঙ্ক ওয়েবিনারে প্যানেল আলোচনায় এসব মন্তব্য উঠে আসে।

ওয়েবিনারে বক্তব্য দেন পর্তুগিজ রাজনীতিবিদ, পর্তুগালের সমাজতান্ত্রিক দল পার্টিডো সোশ্যালিস্টার নেতা ও ইউরোপীয়ান পার্লামেন্টের সাবেক সদস্য পাওলো কাসাকা। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে নতুন করে চরমপন্থার উত্থান শুধু দেশের জন্য নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়া ও বিশ্বের জন্য উদ্বেগজনক। এর পেছনে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশসহ কয়েকটি উগ্রবাদী ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর ভূমিকা রয়েছে।”
পাওলো কাসাকা দাবি করেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার নেপথ্যে জামায়াতে ইসলামী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল এবং এখনো তারা বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, “হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অত্যন্ত নেতিবাচক ভূমিকা পালন করেছিলেন। স্বাধীনতার ৫৫ বছর পর আবারও যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে বাংলাদেশ নিয়ে ‘খেলা’ শুরু করেছে।”
তিনি ২০২৪ সালের ২৫ জুলাইয়ের ঘটনাপ্রবাহের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ওই সময় বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় দেশে এক ধরনের অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। পাশাপাশি তিনি অভিযোগ করেন, জামায়াত ১৯৭১ সালের ইতিহাস থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের পরিচয় মুছে ফেলার চেষ্টা করছে এবং শাহরিয়ার কবিরের মতো বুদ্ধিজীবীদের লক্ষ্য করে সহিংসতা চালানো হচ্ছে, যারা বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য কাজ করছিলেন।
পাওলো কাসাকা আরও বলেন, “অনেক সাংবাদিককে কোনো অভিযোগ ছাড়াই আটক রাখা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। এই গোষ্ঠী ১৯৭১ সালের বিজয় দিবস মুছে ফেলতে চায় এবং বাংলাদেশ ও স্বাধীনতার সঙ্গে জড়িত সবাইকে নির্মূল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এই মুহূর্তে যদি আমরা আওয়াজ না তুলি, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে।”
ওয়েবিনারের আরেক প্যানেলিস্ট, আমেরিকান রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও সাবেক মার্কিন নৌবাহিনীর চ্যাপেলিন রবার্ট “বব” ল্যান্সিয়া বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়া অত্যন্ত বিরক্তিকর। পাকিস্তান শুধু বাংলাদেশেই নয়, সিন্ধু ও বেলুচিস্তানেও ভয়াবহ নৃশংসতা চালাচ্ছে।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে ‘তৌহিদি জনতা’র নামে সংঘটিত সহিংসতার কোনো জবাবদিহিতা নেই। ধর্মনিরপেক্ষতাকে রক্ষার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।” একই সঙ্গে তিনি প্রশ্ন তোলেন, পাকিস্তানের মুদ্রাস্ফীতি দ্বিগুণ হলেও কীভাবে মার্কিন সহায়তায় দেশটি টিকে আছে।
বব ল্যান্সিয়া আরও বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়া ও বাংলাদেশের দিকে আরও বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। এর পেছনের কারণ বিশ্ববাসী জানলেও খুব কম মানুষ প্রকাশ্যে কথা বলছে।”
১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ অনুষ্ঠিত এই ব্রিঙ্ক ওয়েবিনারটির উপস্থাপনা করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রিয়জিৎ দেবসরকার। প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও আঞ্চলিক ভূরাজনীতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার কথা তুলে ধরেন।