হালিমা খাতুন-দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে জার্মানিতে বসবাস করছেন বাংলাদেশি প্রবাসী হালিমা খাতুন। ভাষাগত দক্ষতা অর্জন থেকে শুরু করে পেশাগত সাফল্য সব মিলিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন প্রবাসী নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা।
বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক হিস্ট্রি অ্যান্ড কালচারে বিএ (অনার্স) ডিগ্রিধারী হালিমা প্রবাসে এসে জার্মান ভাষায় C1 স্তর পর্যন্ত কোর্স সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি কিন্ডারগার্টেনে পার্টটাইম কর্মী হিসেবে কাজের পাশাপাশি অনলাইন ডিজিটাল মার্কেটিং ব্যবসা পরিচালনা করছেন।
চার সদস্যের পরিবারের একজন হিসেবে তিনি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয়। অবসরে নদীর ধারে হাঁটা, গান শোনা ও সেলাইয়ে সময় কাটান।
তার মতে, “নতুন পরিবেশে একীভূত হতে হলে সমাজের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি।”ব্যস্ততা ও সময়ের সংকট সত্ত্বেও ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখাই তার সাফল্যের মূলমন্ত্র।

স্টুটগার্টে দুই দশকের পথচলা: লিপিকা আহমেদের প্রবাস জীবনের গল্প- প্রবাস জীবন কখনো সহজ নয়-ভিন্ন সংস্কৃতি, ভাষা ও জীবনযাত্রার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো একদিকে যেমন চ্যালেঞ্জ, অন্যদিকে তা নতুন সম্ভাবনার দ্বারও খুলে দেয়। জার্মানির স্টুটগার্ট শহরে ২০০৪ সাল থেকে বসবাস করছেন লিপিকা আহমেদ। কর্মজীবী নারী, উদ্যোক্তা ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে তিনি শুধু নিজের স্বপ্ন গড়ছেন না, বরং প্রবাসী কমিউনিটির সাংস্কৃতিক বন্ধনও অটুট রাখছেন।
প্রথমে জার্মান ভাষা শেখার মাধ্যমে নতুন জীবনের পথে এগিয়ে যান তিনি। বর্তমানে B1 কোর্স সম্পন্ন করেছেন। ব্যক্তিজীবনে দুই সন্তানের মা লিপিকা শুরু থেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন প্রথমে ম্যাকডোনাল্ডসে, পরে ‘অ্যাকশন’ এ, আর বর্তমানে ‘মেয়ার্স বেকারাই’-তে ক্যাশিয়ার হিসেবে কর্মরত। পাশাপাশি চালাচ্ছেন অনলাইন ড্রেস ব্যবসা এবং কনটেন্ট ক্রিয়েশন ও ইউটিউব চ্যানেল পরিচালনা করছেন।
স্টুটগার্টে বাঙালি কমিউনিটির প্রায় সব সাংস্কৃতিক আয়োজনে তার সক্রিয় উপস্থিতি রয়েছে-বিজয় দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস, পহেলা বৈশাখ, রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী থেকে শুরু করে ঈদ ও ইফতার মাহফিল পর্যন্ত। লিপিকার ভাষায়, “আমাদের লক্ষ্য প্রবাসে থেকেও দেশীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা।”
অবসর তার জীবনে তেমন নেই বললেই চলে। চাকরি, ব্যবসা ও কনটেন্ট তৈরির ব্যস্ততার মধ্যেই তিনি মানসিক প্রশান্তি খুঁজে পান। প্রবাসী নারীদের উদ্দেশে তার পরামর্শ “একত্র হয়ে সক্রিয় গ্রুপ তৈরি করে একে অপরকে সহযোগিতা করতে হবে। প্রতিভা ও দক্ষতা প্রকাশের সুযোগ তৈরি করলেই আমরা এগিয়ে যেতে পারব।”
চ্যালেঞ্জের প্রসঙ্গে লিপিকা বলেন, “সবচেয়ে বড় বাধা আমাদের মানসিকতা মহিলারা এগিয়ে যাবে, এটা অনেকে সহজভাবে নেয় না। তবে আমি বিশ্বাস করি, আমরা পিছিয়ে নেই, পিছিয়ে থাকবও না।”

ফ্রাঙ্কফুর্টে দুই দশকের পথচলা: দিলশাদ জাহান খানের প্রবাস জীবনের গল্প-২০০৩ সালে জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করতে জার্মানিতে আসেন দিলশাদ জাহান খান। ভাষা ও সংস্কৃতির অজানা জগতে খাপ খাইয়ে নিতে সময় লেগেছে, তবে ধীরে ধীরে সব চ্যালেঞ্জ জয় করে গড়ে তুলেছেন নিজের অবস্থান। ২০১১ সাল থেকে স্বামী ও একমাত্র সন্তানকে নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন ফ্রাঙ্কফুর্টে।
জার্মান ভাষা শেখাকে তিনি প্রবাস জীবনের মূল চাবিকাঠি মনে করেন। বর্তমানে একটি হোটেলের সার্ভিস বিভাগে কর্মরত দিলশাদ প্রতিদিন বিভিন্ন দেশের মানুষের সঙ্গে কাজ করছেন, যা তার অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করছে। পাশাপাশি তিনি অনলাইনভিত্তিক একটি ছোট ব্যবসাও পরিচালনা করছেন।
ফ্রাঙ্কফুর্টের বাংলাদেশি কমিউনিটির সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তার সক্রিয় উপস্থিতি রয়েছে। তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘আমাদের গল্পঘর’ একটি শিল্প ও সাহিত্যকেন্দ্রিক সংগঠন, যা প্রবাসীদের সৃজনশীলতাকে যুক্ত করে রাখে।
অবসরে লেখালেখিই তার মানসিক প্রশান্তির উৎস। প্রবাসী নারীদের উদ্দেশে তার পরামর্শ ভাষা শেখা, স্থানীয় সংস্কৃতি জানা ও সামাজিক অনুষ্ঠানে সক্রিয় অংশগ্রহণই একীভূত হওয়ার সেরা উপায়। তবে বাধা হিসেবে তিনি দেখেন পারিবারিক সহায়তার অভাব ও ইচ্ছাশক্তির ঘাটতিকে।
দিলশাদ জাহান খানের মতে, দৃঢ় সংকল্প আর পারিবারিক সমর্থন থাকলে প্রবাস জীবনের যে কোনো চ্যালেঞ্জ জয় করা সম্ভব।
This article was investigated and produced with the support of Journalism fund Europe.