কাঁপা মন আর কাঁপা হাতে
– ফারুক সৈয়দ, সিল্কেবোর্গ, ডেনমার্ক।
কাঁপা মন আর কাঁপা হাতে
আমি তুলে নিলাম আমার বই,
শক্ত মলাটের আড়ালে লুকানো
যেন ক্লান্ত এক আত্মা।
তার অবয়বে সময়ের ধুলো,
পাতাগুলো যেন দীর্ঘশ্বাসে ভরা
ভিজে কাপড়ের মতো ঝুলে আছে –
গ্লানিভর শ্রান্ত অবসন্ন ।
আমি ধীরে খুললাম তাকে,
জানি না কোথা থেকে শুরু করব,
তবু কৌতূহল ছিল –
যেন এক ভুলে যাওয়া দরজার ফাঁক দিয়ে আলো ঢোকার অপেক্ষা।
চোখ দুটো সময়ের ধূসরতায় ঝাপসা,
তবু এক মুহূর্তে স্থির হলো,
আর বিষণ্ণতার প্রবাহ গেলো থেমে।
ডান দিকের সাদা নির্জন এক পৃষ্ঠায়
অনাসক্ত শৈত্যপূর্ণ হীমে ছাপা এক সংখ্যা,
তার ভেতরেই লুকিয়ে আছে এক নীরব প্রশ্ন।
পাতাটি অনলিখিত, অথচ বলছে কিছু,
যেন অদৃশ্য কালি ধীরে ধীরে নিজের অর্থ খুঁজে নিচ্ছে—
এক অচেনা ধাঁধার মতো,
যা হৃদয়ের ভেতর জন্ম নিচ্ছে,
শব্দের আগে, অর্থেরও বাইরে।
মন ছুটে চলেছে –
আমি এখনো জিজ্ঞেস করিনি,
‘এর মানে কী?’
দৃষ্টি যেন কফিনের সাদাতে ঘোলাটে হয়ে যায়,
আর আমি দেখি, কাঁদতে থাকা ছায়ারা মিশে যাচ্ছে একে অপরের সাথে-
দুটো রূপ উঠে আসে,
দুলছে, হাসছে, যেন ক্রূর পরিহাসে লিপ্ত –
’সাত আর তিন!’
পাতার কাঁপা পৃষ্ঠের মাঝে আমি দেখি
গূঢ়মর্ম অবধারিত এক প্রতিবিম্ব, এক সত্য,
যা লেখা নেই, তবু বলা হয়ে গেছে।
আর সেখানে, ঝাপসা আয়নায়,
কালির বদলে প্রতিফলনে জ্বলছে এক প্রশ্ন –
‘এই কী শেষ?’